ভালোবাসার নানা রঙ

আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। এ ভালোবাসার
গভীরতা অবিনশ্বর, কখনো শেষ হওয়ার নয়। তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে পারি
না। তোমাকে ছাড়া একটি বেলা আমাকে পেরেশান করে তোলে। কিন্তু এই কথাটি আমাদের খুব চিন্তায়
ফেলে দেয়—আমাদের তো একদিন মৃত্যু হবেই! আমরা তো একসময় এই দুনিয়াতে ছিলাম না, এবং ধ্রুব
সত্য এই যে, আমরা সব সময় এই দুনিয়াতে থাকব না। তাহলে আমাদের এই ভালো লাগা, ভালোবাসা,
একে অপরের স্নিগ্ধ মায়া, মহব্বত—এগুলোর কী হবে? আমরা যে বলছি, একে অপরকে ছাড়া থাকতে
পারব না, চলতে পারব না—তাহলে এটা কি কখনো সম্ভব?
তোমাকে দেখলে আমার যে প্রচণ্ড ভালো লাগা,
ভালোবাসা, অভিনব আকর্ষণ ও অনুভূতি কাজ করে—এগুলো কি তাহলে সব মিথ্যে? না, আমি এটা কখনোই
মানতে চাই না। এর পাশাপাশি আমি একজন মুসলিম। এ কথাটি আমাকে মনে রাখতেই হবে, এবং তুমিও
মুসলিম। মুসলিম মানে হলো—আল্লাহর কাছে সবকিছু আত্মসমর্পণ করে তাঁর বিধান মেনে নেওয়া।
এবার একটু দেখি, আমাদের এই কথায়, আমাদের আলোচনায়, আল্লাহর বিধানে বা ব্যবস্থাপনায় কোনো
দ্বৈততা সৃষ্টি করছে কি না। আমরা একটি হাদিস থেকে জানি—রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না,
যতক্ষণ না আমি তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হই।”
এর মানে—আমি একজন মুসলিম হিসেবে তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারি না। কিন্তু তোমাকে
তো ভালোবাসতেই হবে! তোমাকে ভালো না বাসলে আমার দিন কাটে না, রাত কাটে না, এমনকি সন্ধ্যাও
বিমর্ষ লাগে।
আচ্ছা, তাহলে কি আমার ধর্ম আমাকে এখানে বাধা
দিল? আমি যা করতে চাই, তাতে কি বাধা সৃষ্টি করল? কিন্তু আমি যেহেতু আখিরাতে বিশ্বাসী,
যেহেতু পরকালকে মানি, এবং যেহেতু দেখছি—মানুষমাত্রই মৃত্যুবরণ করে, সেহেতু আমার জন্য
উপকারী সেটাই হবে, যা আমাকে আমার ধর্ম বলছে, যা আমার আল্লাহ আমাকে শেখাচ্ছেন। আচ্ছা,
আমি যদি আমার ভালোবাসার প্রথম ধাপটি রাসুলের জন্য ছেড়ে দিই, তাহলে তো আমার কোনো সমস্যা
হচ্ছে না, তাই না? আমার ধর্ম মতে, আমি আমার ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্থান আমার আল্লাহ এবং
রাসুলকে দিলাম। এরপর তো আর কাউকে ভালোবাসতে কোনো সমস্যা নেই, তাই না? না, আসলেও কোনো
সমস্যা নেই, তবে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যাকে ভালোবাসো, কোনো সমস্যা নেই, তবে সেই
ভালোবাসায় যেন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল উপেক্ষিত না হন। হ্যাঁ, কোনো সমস্যা তো নেই!
আমি তোমাকে ভালোবাসি, প্রচণ্ড ভালোবাসি—এবং সে ভালোবাসা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সমর্থন
করবেন, তাঁরাও ভালোবাসবেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো—রাসুল আমাদের বলেছেন,
“যদি কেউ কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, তাহলে আল্লাহও তাকে ভালোবাসবেন।”
এর মানে, আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব, এবং আল্লাহ সেই ভালোবাসা সমর্থনও করবেন! এমনকি
তোমার ভালোবাসার মধ্যেই আল্লাহর ভালোবাসা লুকায়িত থাকবে। তোমাকে বেশি ভালোবাসতে পারলে,
আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন। তাহলে তো ভালোবেসে আমি সবাইকে একত্রে পেতে পারছি! আমি তোমাকেও
চাই, আমি আমার ধর্ম ইসলামকেও চাই, আমি আমার রাসুলকে চাই, আমি আমার আল্লাহকে চাই! আর
সবকিছু পেতে পারি—তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসে! আর যদি আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি
আল্লাহর জন্য, তবে সেই ভালোবাসাটাও রাসুলের নির্দেশেই হবে, অর্থাৎ, রাসুলের প্রতি ভালোবাসাও
তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কারণ, তোমাকে ভালোবাসতে গিয়েও আমি চিন্তা করছি—আমার রাসুল,
আমার আল্লাহ, তোমার ভালোবাসায় বেজার হয়ে যাচ্ছেন কি না। এই যে চিন্তা, এই যে আল্লাহ
ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে আমাদের ভাবনা—এটাই তো অধিক ভালোবাসার চিরন্তন দলিল!
তোমাকে ভালোবাসছি মানে, আমি আমার রাসুলকেও
ভালোবাসছি; আর রাসুলকে ভালোবাসছি মানে, আল্লাহর ভালোবাসা অফুরন্ত হয়ে আমাদের মাঝে মিলিত
হচ্ছে। এবং আমাদের ভালোবাসাও দীর্ঘ হচ্ছে—এই ভালোবাসার কোনো মৃত্যু নেই, এই ভালোবাসার
কোনো ক্ষয় নেই। এই ভালোবাসা আমৃত্যু অমৃত ফলের মতো অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। চমৎকার! আমার
ধর্ম কত চমৎকার! আমার আল্লাহর নির্দেশনা কত চমৎকার! আমি তো কেবল তোমাকেই ভালোবাসতে
চেয়েছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে আমি আরও কত অমূল্য ভালোবাসা, প্রেম, মহব্বত ও মায়া একসঙ্গে
পেয়ে গেলাম!
আর কী আশ্চর্যের ব্যাপার! আমি তোমার ভালোবাসায়
জীবন দিতে পারছিলাম না, অথচ আমার মৃত্যুর পরে বা তোমার মৃত্যুর পরে ভালোবাসা খানখান
হয়ে যেত। কিন্তু সে ভালোবাসাকে অফুরন্ত ও জীবন্ত করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন আমার আল্লাহ। আমার
আল্লাহ এমন এক পথ দেখিয়েছেন, যে পথে যদি আমি ও তুমি চলি, এবং পরস্পরকে ভালোবাসি, তাহলে
সেই ভালোবাসা অনন্তকালের দিকে যাত্রা নেবে। এর পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ আমাদের তাঁর
আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন—সেই সময়ে, যখন আর কোনো ছায়া থাকবে না, আর কোনো আশ্রয় থাকবে
না। কত মহান আমার আল্লাহ! কত মহান আমার আল্লাহর সৃষ্টি! কত মহান আমার আল্লাহর মনোনীত
একমাত্র ধর্ম—ইসলাম! আমি আমার ধর্মের মাধ্যমেই তোমাকে পেয়েছি!
তাহলে কি আমি তোমাকে আমার ধর্মের মতো করেই
আগলে রাখব না? সেজন্যই আমি তোমাকে বলতে পারছি—সহধর্মিণী, তুমি আর আমি একই ধর্মের অনুসারী,
একই ধর্ম মেনে আমরা পরস্পরের কাছে এসেছি, পরস্পরকে ভালোবেসেছি। তোমার অপরূপ সৌন্দর্যে
বারবার মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু জানো কি? প্রচণ্ড ভালোবাসায় কেউ রাগ করেনি। বরং আল্লাহ
বলেছেন—”তোমাদের ভালোবাসা সুন্দর হোক, তোমাদের ভালোবাসা মহিমান্বিত হোক, শুধু
তোমাদের ভালোবাসায় আমাকে রেখো—তাহলেই হবে।” কত মহান, কত দয়ালু আল্লাহ! আমাদের
এই অকৃত্রিম ভালোবাসার মধ্যেও তিনি আমাদের জন্য দয়া, মায়া ও মহব্বত বিস্তার করতে চান।
আহ্! কী সৌভাগ্য আমাদের, তাই না?
বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসব, তোমার সৌন্দর্য উপভোগ করব, তোমাকে মায়া নিয়ে স্পর্শ করব। এতে কি আমাদের আল্লাহ, আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক রাগ করবেন? বরং তিনি বাহবা দেবেন—বলবেন, “তোমরা আমার জন্য ভালোবাসছ? তাহলে আমি তোমাদের জন্য আমার অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে দিলাম!” আমি তো এমনই অবিনশ্বর ভালোবাসা চেয়েছিলাম! আমি তোমাকে চাই, তোমার প্রেমকে চাই—জীবন্ত ও চিরস্থায়ী রূপে! তাহলে চলো, আমরা আমাদের ভালোবাসাকে ত্রিভুজ করে ফেলি। আমি তোমাকে ভালোবাসব, তুমি আল্লাহকে ভালোবাসবে, আর আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন। এভাবেই আমাদের ভালোবাসা অনন্তকালের দিকে যাত্রা করবে—যেখানে কোনো মৃত্যু নেই, কোনো কষ্ট নেই, আছে কেবল ভালোবাসা ও অফুরন্ত সুখ!