ইশরাত নাহার ইরিনা
স্বাস্থ্য শিক্ষক
মাস্টাবেশন (Self-Love): বিজ্ঞান কী বলে?
মাস্টারবেশন বা সেলফ-লাভ নিয়ে আমরা
সচরাচর সরাসরি কথা বলতে চাই না, আর যদি বলিও, তবে ভুল ধারণাগুলোই বেশি আলোচিত হয়।
আজকের এই আলোচনায় আমরা মাস্টারবেশন-এর কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখব, যা আমাদের
যৌন স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
মাস্টারবেশন আসলে
কী?
মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই একটি সহজাত
জৈবিক চাহিদা আছে। মাস্টারবেশন হলো নিজের যৌনতাকে (sexuality) অন্বেষণ করা এবং
অর্গাজম বা ইজাকুলেশনের মাধ্যমে জমাট বাঁধা উত্তেজনাকে মুক্ত করা। যখন কেউ
মাস্টারবেশন করেন, তখন ইজাকুলেশন বা অর্গাজমের মাধ্যমে শরীর থেকে একটি ফ্লুইড বের
হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ফ্লুইডকে সিমেন
বলা হয়। সিমেন হলো শুক্রাণু (sperm) এবং পুরুষ প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন
– প্রোস্টেট, সেমিনাল ভেসিকল এবং বাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থি থেকে আসা অন্যান্য
ফ্লুইডের মিশ্রণ। ইজাকুলেশনের মাধ্যমে এই সিমেন পুরুষাঙ্গ (penis) থেকে বের হয়ে
আসে। এটি যৌন মিলন বা মাস্টারবেশন—উভয় মাধ্যমেই হতে পারে। যৌন উত্তেজনা অনুভব
করলে পুরুষাঙ্গের রক্তনালীগুলোতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, যা পুরুষাঙ্গকে বড় ও
শক্ত করে তোলে (ইরেকশন), এবং এর মাধ্যমেই ইজাকুলেশন ঘটে।
নারীদের ক্ষেত্রেও অর্গাজম অনেকটাই একই
রকম। যৌন উত্তেজনা অনুভব করলে তাদের অর্গাজম হয় এবং এক ধরনের ফ্লুইড নিঃসৃত হয়,
যা নারী প্রজননতন্ত্রের গ্রন্থিগুলো থেকে উৎপন্ন হয়। এই ফ্লুইডও যৌন মিলন বা
মাস্টারবেশন—উভয় পরিস্থিতিতেই নিঃসৃত হতে পারে।
এই ফ্লুইডগুলো যখন শরীর থেকে বেরিয়ে
আসে, তখন মানুষ মানসিকভাবে অনেক স্বস্তি বোধ করেন, টেনশন দূর হয় এবং শারীরিক ও
মানসিকভাবে ভালো অনুভব করেন।
মাস্টারবেশন কি
ক্ষতিকর? কতটুকু নিরাপদ?
প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো ও খারাপ দিক
আছে। কোনো ভালো কাজও যদি অতিরিক্ত পরিমাণে করা হয়, তা ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন,
স্বাস্থ্যকর খাবারও যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তা শরীরের ক্ষতি করে। মাস্টারবেশনের
ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। অতিরিক্ত মাস্টারবেশন ক্ষতিকর হতে পারে।
অনেক সময় মানুষ পর্নোগ্রাফির প্রতি
আসক্ত হয়ে পড়েন, যা বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে। পর্নোগ্রাফিতে যা দেখানো হয়, তা
প্রায়শই অবাস্তব স্ক্রিপ্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং বাস্তব যৌনতার সাথে এর
কোনো মিল থাকে না। পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি এবং এর ফলস্বরূপ অতিরিক্ত
মাস্টারবেশন সময় নষ্ট করে এবং মানসিক শক্তি ক্ষয় করে।
যদিও কিছু প্রচলিত ধারণা আছে যে
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন অন্ধত্ব, পুরুষত্বহীনতা (impotency), ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা
বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে, বিজ্ঞান এই দাবিগুলোকে সমর্থন করে না। তবে, অতিরিক্ত
মাস্টারবেশন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, অবিবাহিত ব্যক্তিরা যারা অতিরিক্ত মাস্টারবেশনে অভ্যস্ত, তাদের
বিবাহিত জীবনে যৌন মিলনের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে, যা সম্পর্কের সমস্যা তৈরি
করতে পারে।
তবে, বৈজ্ঞানিকভাবে মাস্টারবেশনকে
স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক বলে গণ্য করা হয়। এর পক্ষে অনেক গবেষণাপত্র রয়েছে,
যদিও এর বিপক্ষেও কিছু মতবাদ প্রচলিত আছে। সামগ্রিকভাবে, বিজ্ঞান মাস্টারবেশনকে
সমর্থন করে।
পুরুষদের
ক্ষেত্রে গবেষণার ফলাফল: প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি পরিচালিত একটি
উল্লেখযোগ্য গবেষণা ১৮ বছর ধরে ৩১,৯২৫ জন পুরুষের উপর পরিচালিত হয়েছিল। এই
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তরুণ বয়সে পরিমিত পরিমাণে মাস্টারবেশন করেছেন, তাদের
প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৩% পর্যন্ত কমে গেছে।
কীভাবে এটি ঘটে? ইজাকুলেশনের মাধ্যমে
সিমেনের সাথে শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিন এবং ব্যাকটেরিয়াও বেরিয়ে আসে। যদি কেউ
মাস্টারবেশন না করেন বা যৌনভাবে সক্রিয় না থাকেন, তখন এই টক্সিন ও
ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রোস্টেট গ্রন্থিতে জমা হতে পারে, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের
ঝুঁকি বাড়ায়।
এই গবেষণা অনুযায়ী, একজন পুরুষ প্রতি
মাসে ২১ বার পর্যন্ত মাস্টারবেশন করতে পারেন। তবে, এই গবেষণার ফলাফলগুলো পশ্চিমা
দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে করা, এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সম্পূর্ণ প্রযোজ্যতা
নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাস্টারবেশন যেন অতিরিক্ত না হয়,
সময়ের অপচয় না হয় এবং পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি তৈরি না করে। যখনই আপনি যৌন
উত্তেজনা অনুভব করেন, বা অন্য যেকোনো সময়, আপনি পরিমিত পরিমাণে মাস্টারবেশন করতে
পারেন।
নারীদের ক্ষেত্রে
গবেষণার ফলাফল: মানসিক ও শারীরিক উপকারিতা
নারীদের মাস্টারবেশন নিয়েও বিভিন্ন
গবেষণা হয়েছে। একটি ২০ বছর মেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন উত্তেজনা প্রশমনের
জন্য মাস্টারবেশন অত্যন্ত কার্যকর।
নারীদের ক্ষেত্রে অর্গাজমের সময়
জরায়ুর সংকোচন (uterine contraction) হয়। এটি মাসিকের রক্তপ্রবাহকে সহজ করে এবং
মাসিকের সময়কার ব্যথা ও ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। অর্গাজমের ফলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের
কার্যকারিতাও ভালো হয়।
এছাড়াও, অর্গাজম বা মাস্টারবেশনের ফলে
নারীদের শরীর থেকে হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়, যেমন— ডোপামিন, অক্সিটোসিন এবং
এন্ডোরফিন। ডোপামিনকে “মোটিভেশনাল মলিকিউল” বলা হয়, আর অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন
হলো সুখের হরমোন। এই হরমোনগুলো নিঃসৃত হলে নারীরা মানসিকভাবে ভালো অনুভব করেন,
শারীরিকভাবে স্বস্তি পান, যৌন উত্তেজনা সাময়িকভাবে হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন ধরনের
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পান।
চূড়ান্ত কথা:
পরিমিতিই মূল চাবিকাঠি
বিজ্ঞান মাস্টারবেশনকে শারীরিক ও
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে সমর্থন করে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিমিতি।
আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা প্রত্যেকের থেকে ভিন্ন। তাই আপনার জন্য কতটুকু
মাস্টারবেশন উপযুক্ত, তা আপনাকে নিজেই বুঝতে হবে।
মনে রাখবেন:
- মাস্টারবেশন যেন আপনার সময় নষ্ট না করে।
- এটি যেন কোনো আসক্তিতে
পরিণত না হয়।
- পর্নোগ্রাফির প্রতি
অতিরিক্ত আসক্তি এড়িয়ে চলুন।
যারা যৌনভাবে সক্রিয় (বিবাহিত), তাদের
ক্ষেত্রে মাস্টারবেশনের প্রয়োজনীয়তা কম হতে পারে। তবে, যারা যৌনভাবে নিষ্ক্রিয়,
তাদের জন্য এটি একটি উপকারী অভ্যাস হতে পারে। বিজ্ঞান বলছে, মাস্টারবেশন আপনার
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত কিছু করা সব সময়ই ক্ষতিকর।
নারী অর্গাজম: একটি বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক আলোচনা
বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের শরীরে বিভিন্ন
ধরনের সেক্স হরমোন বা লৈঙ্গিক হরমোনের উৎপাদন শুরু হয়, যার ফলস্বরূপ আমরা নানা
শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাই। এই সময়ে আমাদের শরীরে একটি বিশেষ
চক্র তৈরি হয়, যাকে যৌন প্রতিক্রিয়া চক্র (Sexual Response Cycle) বলা হয়। এই চক্রের চারটি প্রধান অংশ
রয়েছে:
১. লিবিডো বা আকাঙ্ক্ষা (Desire) ২. উত্তেজনা (Excitement) ৩. অর্গাজম (Orgasm) ৪. অবসান (Resolution)
আজকের এই আলোচনায় আমরা যৌন
প্রতিক্রিয়া চক্রের তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ নারী অর্গাজম নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব। পুরুষদের
ক্ষেত্রে অর্গাজমের প্রক্রিয়া ভিন্ন এবং এটিকে সাধারণত ইজাকুলেশন (Ejaculation) বলা হয়, যা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই
অন্য একটি ভিডিওতে আলোচনা করেছি।
অর্গাজম
আসলে কী?
অর্গাজম হলো একটি চরম যৌন পরিতৃপ্তি বা যৌন সুখ (sexual pleasure) যা একজন নারী অনুভব করেন। এটি মূলত
পেলভিক অঞ্চলে (শ্রোণিদেশীয় অঞ্চল) পেশী সংকোচনের ফলে সৃষ্ট হয়। যৌন প্রতিক্রিয়া
চক্রের তৃতীয় ধাপে এই তীব্র অনুভূতি অনুভূত হয়। হরমোনজনিত কারণ, দৃশ্যমান
উদ্দীপনা, স্পর্শকাতরতা, মাস্টারবেশন বা যৌন মিলনের মতো বিভিন্ন কারণে অর্গাজম হতে
পারে।
অর্গাজম নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত
আছে। অনেকে মনে করেন যে অর্গাজমের সময় কোনো তরল নিঃসৃত হয় না, আবার অনেকে মনে করেন
এটি শুধুমাত্র ক্লিটরিস থেকেই হয়। এই আলোচনায় আমরা এই ভুল ধারণাগুলো ভাঙব।
অর্গাজমের
প্রকারভেদ: বিজ্ঞান কী বলে?
গবেষণায় দেখা গেছে, অর্গাজম প্রধানত ১১ প্রকারের হতে পারে। যদিও কিছু গবেষণায় এর
ভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা এখানে ১১টি প্রধান প্রকার নিয়ে আলোচনা করব।
অর্গাজম হলো এক প্রকার তীব্র অনুভূতি বা যৌন সুখ, যা পেলভিক অঞ্চলের পেশী সংকোচনের
মাধ্যমে অনুভূত হয়। পেলভিক অঞ্চল বলতে নারী প্রজনন অঙ্গের শুরু থেকে শরীরের নিচের
অংশ পর্যন্ত বোঝায়। জেনিটালস হলো নারীর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গসমূহ, যার
মধ্যে বাহ্যিক অঙ্গগুলোকেই মূলত জেনিটালস বলা হয়।
১১ প্রকারের অর্গাজমের মধ্যে সবচেয়ে
পরিচিত এবং প্রচলিত হলো:
১. ক্লিটরাল অর্গাজম (Clitoral Orgasm): নারীর বাহ্যিক প্রজনন অঙ্গ ক্লিটরিস
উদ্দীপিত হওয়ার মাধ্যমে এটি ঘটে। এটি অর্গাজমের সবচেয়ে সাধারণ ধরন।
অন্যান্য প্রকারগুলো হলো:
২. নিপল অর্গাজম (Nipple Orgasm): স্তনবৃন্তের উদ্দীপনার মাধ্যমে ঘটে।
৩. ব্লেন্ডেড
অর্গাজম (Blended Orgasm):
ক্লিটরিস এবং যোনির যৌথ উদ্দীপনায় ঘটে। ৪. মাল্টিপল অর্গাজম (Multiple Orgasm): একটি নির্দিষ্ট সময়ে একাধিক অর্গাজম
অনুভব করা। ৫. এক্সারসাইজ অর্গাজম (Exercise Orgasm): শারীরিক অনুশীলনের সময় ঘটে, যা
“কোরগাজম” নামেও পরিচিত। ৬. স্লিপ অর্গাজম (Sleep Orgasm): ঘুমের মধ্যে ঘটে, যা “নৈশ
অর্গাজম” নামেও পরিচিত। ৭. ভ্যাজাইনাল অর্গাজম (Vaginal Orgasm): যোনির অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনায় ঘটে। এর দুটি
প্রধান উপপ্রকার হলো: * জি-স্পট অর্গাজম (G-Spot Orgasm): যোনির ভেতরের একটি নির্দিষ্ট সংবেদনশীল অংশ
(জি-স্পট) উদ্দীপিত হওয়ার মাধ্যমে ঘটে। * ডিপ ভ্যাজাইনাল এক্সোজেনাল জোন অর্গাজম
(Deep Vaginal Erogenous Zone Orgasm): যোনির গভীর অংশের উদ্দীপনার মাধ্যমে ঘটে। ৮. স্কার্টিং অর্গাজম (Squirting
Orgasm): এটি এক প্রকার
অর্গাজম যেখানে যৌন উদ্দীপনার সময় বা অর্গাজমের ঠিক পূর্বে শরীর থেকে এক ধরনের
তরল (যাকে “সেক্স ফ্লাশ” বলা হয়) নিঃসৃত হয়। এটি মূত্র নয় এবং সবার
ক্ষেত্রে ঘটে না, তবে কিছু নারীর ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। এই তরল নিঃসৃত হওয়ার
বিষয়টি নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে।
যৌন
প্রতিক্রিয়া চক্রের বিস্তারিত ধাপসমূহ
যৌন প্রতিক্রিয়া চক্রের চারটি ধাপকে
ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো:
১. লিবিডো বা আকাঙ্ক্ষা (Desire): * এই ধাপে একজন নারী যৌন আকাঙ্ক্ষা বা
উত্তেজনা অনুভব করতে শুরু করেন। এটি হরমোনজনিত কারণ, মাস্টারবেশন, যৌন মিলন বা
শরীরের অন্যান্য উদ্দীপনার কারণে হতে পারে। * এই ধাপে জেনিটাল (বাহ্যিক প্রজনন
অঙ্গ) অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ক্লিটরিস কিছুটা স্ফীত ও সংবেদনশীল হয়ে
ওঠে। * হৃৎপিণ্ডের গতি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। স্তনবৃন্ত শক্ত হতে
পারে এবং শরীরের অন্যান্য সংবেদনশীল অংশও উদ্দীপিত হতে পারে।
২. উত্তেজনা (Arousal/Excitement): * এই ধাপে একজন নারী আরও বেশি
উদ্দীপিত ও উত্তেজিত অনুভব করেন। * যোনি অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ আরও তীব্র হয়, যার ফলে
যোনিপথ স্ফীত হতে পারে। * ক্লিটরিস এই পর্যায়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
৩. অর্গাজম (Orgasm): * এটি যৌন পরিতৃপ্তির সবচেয়ে তীব্র
এবং চরম পর্যায়। * পেলভিক অঞ্চল এবং জেনিটালে তীব্র পেশী সংকোচন ও উদ্দীপনা ঘটে।
* রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের গতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস অত্যন্ত দ্রুত
হয়। * এই পর্যায়টি খুব স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয় এবং এটি যৌন প্রতিক্রিয়া
চক্রের সবচেয়ে চরম অনুভূতি। * যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, স্কার্টিং অর্গাজমের
ক্ষেত্রে এই সময় তরল নিঃসৃত হতে পারে।
৪. অবসান (Resolution): * এই ধাপে শরীর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরে আসে। * জেনিটালস এবং পেলভিক অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ ও ফোলা কমে আসে। * হৃৎপিণ্ডের
গতি, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিক হয়ে যায়। * এই ধাপটি যৌন
প্রতিক্রিয়া চক্রের শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরকে ফিরিয়ে
আনে।
অর্গাজম এবং
স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
অর্গাজমের ফলে মানুষের মানসিক উত্তেজনা
মুক্তি পায় এবং এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। যদিও সরাসরি কোনো গবেষণায়
অর্গাজমের ফলে ত্বক বা চুল সুন্দর হওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট শারীরিক উপকারিতার প্রমাণ
পাওয়া যায়নি, তবে মানসিক সুস্থতা পরোক্ষভাবে শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে
পারে। যেহেতু অর্গাজম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, তাই পরোক্ষভাবে এটি সামগ্রিক
শারীরিক সুস্থতার উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
অর্গাজম হওয়া বা না হওয়ার সাথে
গর্ভধারণের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকেই মনে করেন অর্গাজম না হলে বা ফ্লুইড নিঃসৃত না
হলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। অনেক সময় মানসিক চাপ, যৌন
হয়রানির অভিজ্ঞতা, বা সঙ্গীর অসচেতনতার কারণে একজন নারীর অর্গাজম নাও হতে পারে।
এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং এ নিয়ে ভয় পাওয়া বা সঙ্গীকে মানসিক আঘাত দেওয়া উচিত
নয়।
শেষ কথা:
যৌন শিক্ষা ও সচেতনতা
যৌন শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী
প্রজনন অঙ্গ সম্পর্কে জানা এবং শিশুদেরও এই বিষয়ে শিক্ষিত করা উচিত। সঠিক জ্ঞান
শিশুদের অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
আমরা আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের নারী অর্গাজম সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছে।
প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন (দ্রুত বীর্যপাত): কারণ, প্রকারভেদ ও প্রতিকার
আজ আমরা বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে
অত্যন্ত প্রচলিত একটি যৌন সমস্যা, প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। অনেক
পুরুষ দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা গ্রহণ করেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পান না। আমার
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সঠিক কাউন্সেলিং, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সঙ্গীর
সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ ছাড়াই এই সমস্যা থেকে
পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
এই প্রবন্ধে আমরা দ্রুত বীর্যপাতের
কারণ, এর প্রকারভেদ, জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে এবং সঙ্গীর সাথে
সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলব।
ইজাকুলেশন
বা বীর্যপাত কী?
ইজাকুলেশন বা বীর্যপাত হলো যৌন মিলনের সময় পুরুষাঙ্গ থেকে সিমেন
(বীর্য) নিঃসৃত হওয়ার প্রক্রিয়া। এটি শুধুমাত্র যৌন মিলনের মাধ্যমেই ঘটে না;
অনেক সময় মাস্টারবেশন বা ঘুমের মধ্যেও এটি ঘটতে পারে। সিমেনে মূলত শুক্রাণু (sperm) এবং অন্যান্য তরল থাকে। শুক্রাণু
বংশগতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত, যা মানব প্রজননে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
বীর্যপাতের প্রক্রিয়াটি ধীর বা দ্রুত
হতে পারে, যার ওপর ভিত্তি করে এর তিনটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:
১. আর্লি ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত
(Premature Ejaculation – PE)
২. ডিলেইড
ইজাকুলেশন (Delayed Ejaculation)
৩. রেট্রোগ্রেড
ইজাকুলেশন (Retrograde Ejaculation)
আর্লি
ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত: বিস্তারিত আলোচনা
দ্রুত বীর্যপাত (PE) পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ যৌন
সমস্যাগুলোর একটি। এতে যৌন মিলনের সময় পুরুষাঙ্গ দ্রুত ইরেক্টেড হলেও বীর্যপাত
খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যায়, ফলে স্বামী-স্ত্রী কেউই সন্তুষ্ট হতে পারেন না। অনেক
সময় চিকিৎসকরা দ্রুত ওষুধ দিয়ে দেন, যা সব সময় কার্যকর হয় না এবং দীর্ঘমেয়াদী
ব্যবহারের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াও
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।
দ্রুত বীর্যপাতের
প্রধান কারণসমূহ:
দ্রুত বীর্যপাতের পেছনে শারীরিক ও
মানসিক উভয় ধরনের কারণই থাকতে পারে।
শারীরিক কারণ:
- প্রোস্টেট
গ্রন্থির সমস্যা:
প্রোস্টেটে কোনো ধরনের আঘাত বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকলে দ্রুত বীর্যপাত
হতে পারে।
- থাইরয়েড হরমোনের
ভারসাম্যহীনতা: থাইরয়েড
হরমোনের কম বা বেশি উৎপাদনও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
- মাদকাসক্তি: রিক্রিয়েশনাল ড্রাগস
বা অ্যালকোহল সেবনের ফলেও দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য
স্বাস্থ্যগত সমস্যা:
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাগুলোও
দ্রুত বীর্যপাতের কারণ হতে পারে।
মানসিক কারণ:
- বিষণ্নতা
(Depression):
দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্নতা দ্রুত বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ।
- মানসিক চাপ
(Stress):
পারিবারিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের চাপ বা ব্যক্তিগত জীবনের চাপও এই সমস্যাকে
প্রভাবিত করে।
- যৌন উদ্বেগ
(Sexual Anxiety):
পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে বা যৌন পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগের কারণে এই
সমস্যা হতে পারে।
- কন্ডিশনিং
(Conditioning):
ছোটবেলায় দ্রুত বীর্যপাত করার অভ্যাস (যেমন গোপনে দ্রুত মাস্টারবেশন শেষ
করা) বড় হয়েও এই সমস্যা বজায় রাখতে পারে।
দ্রুত বীর্যপাতের
প্রতিকার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
ইংল্যান্ডের একটি সরকারি স্বাস্থ্য
সংস্থা NHS
England দ্রুত
বীর্যপাতের সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পদ্ধতি সুপারিশ করে:
- যৌন মিলনের ১-২
ঘণ্টা আগে মাস্টারবেশন: এটি
যৌন উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে, যদিও ধর্মীয় কারণে এটি অনেকের কাছে
গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
- মোটা কনডম
ব্যবহার: পুরুষাঙ্গ ও যোনির
মধ্যে অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা কমানোর জন্য মোটা কনডম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যৌন অবস্থানের
পরিবর্তন:
সঙ্গিনী উপরে থাকলে পুরুষাঙ্গের উপর চাপ কম পড়ে, যা বীর্যপাত দেরিতে হতে
সাহায্য করতে পারে।
এছাড়াও, কিছু সাধারণ বৈজ্ঞানিক এবং
জীবনযাত্রার পরিবর্তন দ্রুত বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
- সাইকোসেক্সুয়াল
থেরাপি: এটি এক প্রকার
কাউন্সেলিং যেখানে সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মানসিক সমস্যাগুলো
চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। সঙ্গীর নেতিবাচক মন্তব্য বা মানসিক
চাপ সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
- মাদক ও অ্যালকোহল
পরিহার: যেকোনো ধরনের
মাদকাসক্তি ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন পরিহার করা উচিত।
- বডি ম্যাসাজ: সপ্তাহে ২-৩ বার গরম
তেল (যেমন অর্গানিক নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল, সরিষার তেল নয়) দিয়ে শরীর ও
জেনিটাল এরিয়াতে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং মন আরাম পায়।
- স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপন:
- পর্যাপ্ত ঘুম: অনিয়মিত ঘুম দ্রুত
বীর্যপাতের অন্যতম কারণ।
- নিয়মিত
ব্যায়াম:
প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
- সুষম খাদ্য: প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান এবং পরিমিত পানি পান নিশ্চিত করুন।
- মানসিক
স্বাস্থ্য:
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মনের যত্ন নেওয়া জরুরি।
অনেক সময় চিকিৎসকরা সরাসরি
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা যৌন উত্তেজক ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার
জন্য জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা গ্রহণ করা অধিক
কার্যকর। মনে রাখবেন, ওষুধ সব সময় শেষ বিকল্প হওয়া উচিত।
ডিলেইড
ইজাকুলেশন (Delayed Ejaculation)
ডিলেইড ইজাকুলেশন হলো যখন বীর্যপাত হতে স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি সময় লাগে। এটি বার্ধক্যজনিত কারণে হতে পারে, তবে কিছু স্বাস্থ্যগত
কারণেও এটি ঘটে:
- ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণহীন থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপের কারণেও
বীর্যপাত দেরিতে হতে পারে।
- প্রোস্টেট বা
মূত্রাশয়ের সার্জারি: এই
ধরনের সার্জারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এটি দেখা দিতে পারে।
- মাল্টিপল
স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis): স্নায়বিক রোগের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
প্রতিকার: এর চিকিৎসায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট,
অ্যান্টিসাইকোটিক বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে। তবে, জীবনযাত্রার
পরিবর্তন, যেমন সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এই
সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেক্স থেরাপি বা কাউন্সেলিংও এক্ষেত্রে
সহায়ক হতে পারে।
রেট্রোগ্রেড
ইজাকুলেশন (Retrograde Ejaculation)
রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে বীর্য
পুরুষাঙ্গের ইউরেথ্রা দিয়ে বের না হয়ে মূত্রাশয়ের দিকে ফিরে যায়। এর ফলে
বীর্যপাতের সময় বীর্যপাত হয় না বা খুব অল্প পরিমাণে হয়। যৌন মিলনের পর
মূত্রত্যাগের সময় প্রস্রাব ঘোলাটে হতে পারে, কারণ এতে বীর্য মিশ্রিত থাকে।
এই ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন
হয় না, কারণ এটি ক্ষতিকর নয়। তবে, যদি কেউ সন্তান ধারণ করতে চান, তাহলে চিকিৎসার
প্রয়োজন হতে পারে, কারণ এই অবস্থায় শুক্রাণু বাহিত হয় না। প্রোস্টেট বা
মূত্রাশয়ে কোনো আঘাতের কারণেও এটি হতে পারে।
উপসংহার:
স্বাস্থ্যকর জীবন ও সঙ্গীর সমর্থনই মূল সমাধান
দ্রুত বীর্যপাত, ডিলেইড ইজাকুলেশন বা
রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশনের মতো যৌন সমস্যাগুলো পুরুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলে, এমনকি
বিবাহবিচ্ছেদের কারণও হতে পারে। দীর্ঘদিনের মেডিসিন গ্রহণ না করে, প্রথমে
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ: শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা বিবেচনা না
করে, রোগীর মানসিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস শোনা উচিত। রক্ত
পরীক্ষা ছাড়াই ওষুধ দেওয়া বা দ্রুত ডিপ্রেশনের ওষুধ প্রেসক্রাইব করা উচিত নয়,
কারণ সবাই ডিপ্রেশনে ভোগেন না।
স্ত্রীদের প্রতি অনুরোধ: আপনার স্বামীর যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে, তবে তাকে অসম্মান করা বা নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। তাকে সমর্থন দিন, পাশে থাকুন এবং একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করুন। স্বামী-স্ত্রী মিলে একজন যৌন বিশেষজ্ঞ বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
পুরুষদের প্রাথমিক যৌন হরমোন: টেস্টোস্টেরন এবং এর প্রভাব
আজ আমরা পুরুষদের একটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ যৌন হরমোন, টেস্টোস্টেরন
নিয়ে কথা বলব। এই হরমোন বয়ঃসন্ধিকাল থেকে পুরুষদের শরীরে তৈরি হওয়া শুরু হয়
এবং নারী ও পুরুষের শারীরিক ও মানসিক পার্থক্যের পেছনে এটি অন্যতম প্রধান কারণ।
টেস্টোস্টেরন
কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
টেস্টোস্টেরন হলো পুরুষদের প্রধান বা
প্রাথমিক যৌন হরমোন। সাধারণত ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়
এবং ঠিক তখনই এই হরমোনের উৎপাদন শুরু হয়। মস্তিষ্কের গোড়ায় অবস্থিত পিটুইটারি গ্রন্থি (pituitary
gland) থেকে একটি সংকেত
রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে টেস্টিসে (testis)
বা শুক্রাশয়ে পৌঁছায়। পুরুষদের প্রজনন অঙ্গগুলোর মধ্যে টেস্টিস (সাধারণত
পুরুষাঙ্গের নিচে স্ক্রোটামের ভেতরে দুটি বলের মতো অঙ্গ) দুটি প্রধান কাজ করে: শুক্রাণু তৈরি করা এবং
টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন করা।
টেস্টোস্টেরনের কাজ: এই হরমোন পুরুষের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য
নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন:
- পুরুষালী
বৈশিষ্ট্য (Masculine Characteristics): শরীরের গঠন, লোমের বৃদ্ধি (যেমন দাড়ি, গোঁফ), কণ্ঠস্বর
ভারী হওয়া ইত্যাদি।
- যৌন অঙ্গের বিকাশ
(Development of Sex Organs): পুরুষাঙ্গ ও শুক্রাশয়ের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।
- যৌন আকাঙ্ক্ষা বা
লিবিডো (Sexual Desire/Libido): পুরুষদের যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে।
- পেশী ও মেদ (Lean
Muscle Mass & Fat):
শরীরে চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং পেশী গঠনে সহায়তা করে।
- হাড়ের বৃদ্ধি ও
ঘনত্ব (Bone Growth, Strength, Density): হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি, শক্তি এবং ঘনত্ব বজায় রাখতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক পরিবর্তনের
পেছনে প্রধানত এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাব থাকে।
টেস্টোস্টেরনের
ভারসাম্যহীনতা এবং এর প্রভাব
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া বা
বেড়ে যাওয়া উভয়ই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
টেস্টোস্টেরন বেড়ে গেলে: পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা
অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের
মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় প্রোস্টেট ক্যান্সারে
আক্রান্ত রোগীদের টেস্টোস্টেরন কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে (Low
Testosterone/Low T):
পুরুষদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর টেস্টোস্টেরন নিঃসরণের পরিমাণ ১% থেকে
২% হারে কমতে থাকে। একজন ২০ বছর বয়সী পুরুষ এবং একজন ৪৫ বছর বয়সী পুরুষের
টেস্টোস্টেরন নিঃসরণের ক্ষমতা সমান থাকে না। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে
নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
- যৌন আকাঙ্ক্ষা
হ্রাস (Decreased Libido): যৌন
মিলনের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
- ইরেক্টাইল
ডিসফাংশন (Erectile Dysfunction): লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা।
- বন্ধ্যাত্ব
(Infertility):
শুক্রাণু উৎপাদন কমে যাওয়ায় সন্তান ধারণে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
- মেজাজ পরিবর্তন
(Mood Swings): খিটখিটে
মেজাজ, বিষণ্নতা বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
- পেশী হ্রাস ও
চর্বি বৃদ্ধি:
শরীরের চর্বি বেড়ে যেতে পারে এবং পেশী কমে যেতে পারে।
- হাড়ের দুর্বলতা: হাড়ের ঘনত্ব কমে
যাওয়ায় হাড় দুর্বল হতে পারে।
নারীদের শরীরেও খুব অল্প পরিমাণে
টেস্টোস্টেরন থাকে, তবে এর মাত্রা বেড়ে গেলে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)
বা অনিয়মিত মাসিকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। (নারীদের হরমোন নিয়ে আমরা অন্য
কোনো দিন বিস্তারিত আলোচনা করব)।
টেস্টোস্টেরন
বুস্ট করার প্রাকৃতিক উপায়
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের বা যাদের
সন্তান আছে, তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে বাড়ানো যায় বা
নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা জানা জরুরি। এতে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব বা পুরুষত্বহীনতার
মতো সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।
১. ঠান্ডা পানিতে গোসল: প্রতিদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে
শরীর শীতল হয়। তখন শরীর নিজেকে গরম করার জন্য মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায়, যার ফলে
টেস্টোস্টেরন ভালোভাবে নিঃসৃত হয়। যারা ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকেন, তারা নিয়মিত
স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করার চেষ্টা করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়ামকে এক প্রকার
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ বলা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে টেস্টোস্টেরন
পরিমিত পরিমাণে উৎপাদিত হয়, যা মনকে সতেজ রাখে এবং মেজাজ ভালো রাখে। দ্রুত হাঁটা,
সাইক্লিং, কিগেল ব্যায়াম, স্কোয়াট, পুশআপ, জিমে যাওয়া বা সাঁতার কাটার মতো
যেকোনো উপযোগী ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।
৩. সুষম খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত
পরিমাণে শর্করা, ভালো চর্বি, ভালো প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল এবং পানি থাকে।
শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। আদা, ডালিম
ইত্যাদির রস টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ও শান্ত ঘুম: যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা দ্রুত বীর্যপাতের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাতে শান্তিতে
পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: ডিপ্রেশন, স্ট্রেস এবং অতিরিক্ত
মানসিক চাপ টেস্টোস্টেরনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে মনকে
সতেজ রাখা জরুরি।
সাবধানতা: টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর জন্য বাজারে
প্রচলিত যৌন উত্তেজক ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ওষুধ
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। উপরন্তু, এগুলো
শুক্রাণু উৎপাদন এবং যৌন আকাঙ্ক্ষাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি
কোনো শারীরিক আঘাত, যেমন মস্তিষ্কের সার্জারি বা দুর্ঘটনার কারণে টেস্টোস্টেরন কমে
যায়, তবে এই চারটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তা ঠিক করার চেষ্টা করুন।
শেষ কথা:
সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি আপনার হাতে
জীবনযাত্রাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলা,
নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুমানো, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা—এই সবগুলোই
আমাদের হাতে আছে। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয় না, বরং দরকার হয় সদিচ্ছা।
আপনি আপনার উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজের জন্য ব্যয় করুন, যাতে শারীরিক ও
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন এবং আপনার যৌন জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল: শরীর ও মনের এক নতুন অধ্যায়
আজ আমরা আমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty)
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এটি এমন একটি সময় যখন
আমাদের শরীর এবং মনে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে। আর এই পরিবর্তনের
প্রধান কারণ হলো সেক্স হরমোন বা অ্যাডাল্ট হরমোনের উৎপাদন শুরু হওয়া। গবেষণায় দেখা যায়, সাধারণত
৮ থেকে ১৩ বছর বয়সে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়।
প্রধান
যৌন হরমোন এবং তাদের প্রভাব
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে প্রধানত ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progesterone) নামক দুটি ফিমেল সেক্স হরমোন তৈরি হতে
শুরু করে। এই হরমোনগুলোই বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
ইস্ট্রোজেনের প্রভাব:
- স্তন বিকাশ: ইস্ট্রোজেন হরমোনের
প্রভাবে স্তনের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। নিপলের আকার ও রঙেও পরিবর্তন
আসতে পারে। এই পরিবর্তন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে, যা সম্পূর্ণ
স্বাভাবিক।
- প্রজনন অঙ্গের
বিকাশ: জরায়ু (Uterus), যোনি
(Vagina) এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের (Fallopian Tube) মতো ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ
অর্গানগুলো ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে।
- শারীরিক গঠন: উচ্চতা বৃদ্ধি পায়,
শরীরের আকার পরিবর্তিত হয় এবং কোমর, নিতম্ব ও উরুতে চর্বি জমার কারণে শরীরের
গঠন আরও সুসংবদ্ধ হয়।
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের
যৌথ প্রভাব: বয়ঃসন্ধিকালের
পর থেকে এই দুটি হরমোন মাসিক চক্র বা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। এর মানে হলো, স্তনের
পরিবর্তন, মাসিক শুরু হওয়া এবং যোনি স্রাব (Vaginal Discharge) — এই তিনটিই হলো
মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রধান পরিবর্তন।
মেয়েদের
বয়ঃসন্ধিকালের তিনটি প্রধান পরিবর্তন
এবার আমরা এই তিনটি প্রধান পরিবর্তন
নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করব:
১. স্তনের
পরিবর্তন
বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি মেয়েরই স্তনের
আকার পরিবর্তিত হয়। কারও স্তন বড় হয়, আবার কারও ততটা বড় নাও হতে পারে। এটি
নিয়ে অনেকে দ্বিধা বা লজ্জায় ভোগেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি
বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণেই এই পরিবর্তনগুলো ঘটে। তাই এই
স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
২. মাসিক
বা পিরিয়ড শুরু হওয়া (Menstruation)
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের যে দ্বিতীয়
প্রধান পরিবর্তনটি আসে, তা হলো মাসিক বা পিরিয়ড
শুরু হওয়া, যার বৈজ্ঞানিক নাম মেনস্ট্রুয়েশন (Menstruation)। মহিলা প্রজননতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
অঙ্গ হলো ডিম্বাশয়
(Ovary)। আমাদের দুটি
ডিম্বাশয় থাকে, যেখানে ডিম্বাণু (Eggs) থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে ফিমেল সেক্স হরমোনের
প্রভাবে ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণুগুলো পরিপক্ক হতে শুরু করে এবং প্রতি মাসে একটি করে
ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়, যাকে ওভিউলেশন (Ovulation) বলে।
বৈজ্ঞানিকভাবে, ওভিউলেশন,
প্রেগন্যান্সি এবং পিরিয়ড একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাসিক চক্র একটি
মেয়েকে ধীরে ধীরে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। এই পিরিয়ড সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন
স্থায়ী হয়। বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে অনেকের মাসিক অনিয়মিত হতে পারে বা ব্যথামুক্ত
নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে
কথা বলা যেতে পারে।
মাসিক চলাকালীন সময়ে মেয়েদের মধ্যে মুড সুইং (Mood Swings) বা মেজাজের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
এই সময়টাতে অন্যদের, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল
হওয়া উচিত। মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড বা পরিষ্কার সুতির কাপড় ব্যবহার করা
হয়। তবে আজকাল মেনস্ট্রুয়াল কাপ (Menstrual Cup) এবং ট্যাম্পনস (Tampons)-এর মতো পদ্ধতিগুলো বেশ জনপ্রিয়
হচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করার আগে সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া উচিত, কারণ ভুল ব্যবহারে
কিছু অসুবিধা হতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে, এই পদ্ধতিগুলো স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।
মাসিকের বৈজ্ঞানিক কারণ: প্রতি মাসে জরায়ুর ভেতরের দেয়াল (uterine
lining) থেকে রক্ত ও টিস্যু যোনির মাধ্যমে বের হয়ে আসে, যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে ডিসচার্জ বলা হয়। ডিম্বাশয়ে থাকা ফলিকল
(ডিম্বাণু) পরিপক্ক হয়। ইউটেরাসের লাইনিং একটি ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে, যা পরিপক্ক
ও অপরিণত ডিম্বাণুগুলোকে আলাদা করে। পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বাশয়েই থাকে এবং
পরবর্তীতে নিষিক্তকরণের জন্য প্রস্তুত হয়। অপরিণত ডিম্বাণুগুলো জরায়ুর দেয়ালের
মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে, যা আমরা মাসিক বা পিরিয়ড বলি। পরিপক্ক
ডিম্বাণুগুলো পরবর্তীতে যৌন মিলনের সময় শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট তৈরি
করে, যা গর্ভধারণের প্রথম ধাপ।
৩. যোনি
স্রাব (Vaginal Discharge)
বয়ঃসন্ধিকালে ফিমেল সেক্স হরমোনের
প্রভাবে যোনি (vagina), জরায়ু (uterus) এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব (fallopian tubes)
ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে। এর ফলে যোনি থেকে এক ধরনের তরল নিঃসৃত হয়, যাকে যোনি স্রাব বা ভ্যাজাইনাল
ডিসচার্জ বলে। এই স্রাব
সাধারণত সাদা রঙের হয়, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে হালকা হলুদ রঙেরও হতে পারে। এর
পরিমাণ বা ঘনত্ব ভিন্ন হতে পারে (যেমন ঘন বা কটেজ চিজের মতো)।
যোনি স্রাবকে ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ
সিস্টেমের হাউসকিপিং
(housekeeping)
প্রক্রিয়া বলা হয়। কারণ এই স্রাবের মাধ্যমে যোনি থেকে মৃত কোষ (dead cells) এবং
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া শরীরের বাইরে বের হয়ে আসে। এটি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে
এবং প্রজনন অঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে। তাই এই স্রাব নিয়ে ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কোনো
কারণ নেই। এই সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে অনেক ধরনের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা
করা যায়।
অন্যান্য
শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন
উপরে উল্লিখিত তিনটি প্রধান পরিবর্তন
ছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে আরও অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে:
- পেলভিক এরিয়ায়
ওজন বৃদ্ধি ও নিতম্বের বিকাশ: এই সময় মেয়েদের পেলভিক এরিয়ায় ওজন বাড়ে এবং নিতম্ব
(hips) ভারী হতে শুরু করে, যা তাদের পরিণত শরীরের দিকে নিয়ে যায়।
- লোম বৃদ্ধি (Hair
Growth): বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের
বগলে, পিউবিক এরিয়ায় এবং পায়ে লোম গজাতে থাকে। লোমের ঘনত্ব ভিন্ন হতে
পারে। এই লোম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে সুরক্ষায়
সাহায্য করে। লোম বৃদ্ধি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা বা লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই।
প্রয়োজনে চুল অপসারণের পদ্ধতি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা যেতে
পারে।
- ব্রণ ও পিম্পল
(Acne & Pimples): নতুন
হরমোন তৈরি হওয়ার কারণে তৈল গ্রন্থি (sebaceous glands) প্রভাবিত হয়, যার
ফলে বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ ও পিম্পল দেখা দেওয়া খুবই সাধারণ।
- ঘাম বৃদ্ধি ও
দুর্গন্ধ (Increased Sweating & Odor): এই সময়ে ঘাম গ্রন্থিগুলোও প্রভাবিত হয়, ফলে
অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘামে দুর্গন্ধও থাকতে পারে।
তাই এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা (cleanliness) বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
মানসিক ও
মস্তিষ্কের বিকাশ
শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি
বয়ঃসন্ধিকালে মস্তিষ্কের বিকাশ (Brain Development) ঘটে। এই সময় পরিবারে উচিত সন্তানদের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ (decision making), সমস্যা সমাধান (problem solving) এবং পরিকল্পনা করার মতো
কাজে যুক্ত করা, যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল ও উৎপাদনশীল হতে পারে।
এছাড়াও, এই সময়ে হাত-পায়ের আকারে
পরিবর্তন আসে এবং সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি (Center of Gravity) দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এর ফলে মস্তিষ্ক নতুন
পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সময় নেয়, যার কারণে ছেলেমেয়েরা কিছুটা অস্থির ও
আনাড়ি (clumsy) অনুভব করতে পারে এবং সহজে আঘাত পেতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকালে শরীরকে হরমোন তৈরির মেশিন বলা হয়। এই সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ
একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাই পরিবারের বড়দের উচিত সন্তানদের জন্য একটি সুষম
খাদ্য তালিকা তৈরি করা, যা তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং উর্বরতাকে (fertility)
উন্নত করবে।
শেষ কথা:
খোলামেলা আলোচনা ও সমর্থন
বয়ঃসন্ধিকালের এই সমস্ত পরিবর্তন
নিয়ে মা-বাবা এবং পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের উচিত ছেলেমেয়েদের সাথে খোলামেলা আলোচনা (open
discussion) করা। এতে তারা
লজ্জা পাবে না, বিভ্রান্ত হবে না এবং বাইরের পরিবেশ থেকে ভুল তথ্য নেবে না।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শিশুদের আত্মবিশ্বাসী হতে এবং পড়াশোনা ও অন্যান্য
কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন: একটি সাধারণ যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা ও এর সমাধান
আজ আমরা একটি অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু
গুরুতর যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব: ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (Erectile Dysfunction
– ED), যা বাংলায়
পুরুষত্বহীনতা বা লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা নামে পরিচিত। এই সমস্যায় অনেক পুরুষ
শারীরিক ও মানসিকভাবে ভুগছেন, যা তাদের বিবাহিত জীবনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে এই ইরেক্টাইল ডিসফাংশন। এই প্রবন্ধে আমরা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন কী, কেন
হয় এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
ইরেক্টাইল
ডিসফাংশন কী ও কেন হয়?
ইরেকশন বলতে বোঝায় পুরুষাঙ্গের উত্থান, যা
যৌন মিলনের জন্য অপরিহার্য। যখন একজন পুরুষের লিঙ্গ সঠিকভাবে উত্থান হয় না বা
উত্থান ধরে রাখতে পারে না, তখন তাকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বলা হয়। এর মূল কারণ হলো
পুরুষাঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ না হওয়া। সাধারণত, যৌন উত্তেজনার সময় লিঙ্গে
রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়, ফলে লিঙ্গ দৃঢ় হয়। ইরেক্টাইল
ডিসফাংশনে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণগুলো মূলত
দু’ভাগে বিভক্ত: শারীরিক এবং মানসিক।
১. শারীরিক কারণ: ইরেক্টাইল ডিসফাংশনকে বৈজ্ঞানিকভাবে ইম্পোটেন্স (Impotence) বা অক্ষমতা বলা হলেও, এটিকে কেবল একটি
শারীরিক অবস্থা হিসেবে দেখলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো থাকে। এই সমস্যায় ভোগা
পুরুষরা এবং তাদের সঙ্গীরা প্রায়শই পর্যাপ্ত তথ্য ও সহমর্মিতার অভাবে ভোগেন, যা
শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদের মতো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়।
শারীরিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- অন্তর্নিহিত
স্বাস্থ্য সমস্যা: উচ্চ
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো সমস্যাগুলো
পুরুষাঙ্গের রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহকে
প্রভাবিত করে।
- জেনিটাল বা
প্রোস্টেট সমস্যা: পুরুষাঙ্গ
বা প্রোস্টেট গ্রন্থির যেকোনো সমস্যাও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে।
রক্তনালী সরু হয়ে গেলে পুরুষাঙ্গে রক্ত প্রবাহ
ব্যাহত হয়।
- ঔষধের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হতে পারে।
- আঘাত বা
সার্জারি: ছোটবেলায়
বা বড়বেলায় কোনো ধরনের শারীরিক আঘাত বা সার্জারি পুরুষাঙ্গের স্নায়ু বা
রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- নিউরোলজিক্যাল বা
এন্ডোক্রাইন সমস্যা:
স্নায়ুতন্ত্রের বা হরমোন-সম্পর্কিত (যেমন টেস্টোস্টেরনের অভাব) কোনো
ডিসঅর্ডারও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত
হস্তমৈথুন বা পর্নোগ্রাফি আসক্তি: অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তিও এই
সমস্যার কারণ হতে পারে।
- যৌন উত্তেজক
ঔষধের অপব্যবহার:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যৌন উত্তেজক ঔষধ গ্রহণ করাও ভবিষ্যতের জন্য বিপদ
ডেকে আনতে পারে। অনেকে বন্ধু বা আত্মীয়ের পরামর্শে এই ঔষধগুলো সেবন করেন, যা
পরবর্তীতে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হয়। কোনো অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন করা যাবে না, এমনকি পরীক্ষামূলকভাবেও নয়। এই ঔষধগুলো
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি, লিভারের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২. মানসিক কারণ: শারীরিক কারণগুলোর পাশাপাশি মানসিক
চাপ, উদ্বেগ (Anxiety), বিষণ্নতা (Depression), পারিবারিক কলহ এবং সঙ্গীর সাথে
মানসিক দূরত্বও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের প্রধান কারণ। শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার
হওয়া অনেক পুরুষ বিবাহিত জীবনেও সেই ট্রমা থেকে বের হতে পারেন না, যার ফলে তাদের
ইরেকশনে সমস্যা দেখা দেয়।
ইরেক্টাইল
ডিসফাংশন থেকে পরিত্রাণের উপায়
যদি কোনো দম্পতি ইরেক্টাইল ডিসফাংশন
সমস্যায় ভোগেন, তবে সমস্যা সমাধানে উভয়কেই সমান দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল হতে
হবে।
ধাপ ১: জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: প্রথমে পুরুষদের ওজন
ঠিক আছে কিনা, তা দেখতে হবে। যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে, তাহলে সুষম খাবার এবং
নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
- রোগ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ,
ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের মতো যেকোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা
নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপন:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা এবং মানসিক চাপ
নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
ধাপ ২: সম্পর্কের উন্নতি:
- সঙ্গীর সাথে খোলামেলা কথা
বলুন (Open Communication)।
যেহেতু এই সমস্যাটি সঙ্গিনীও অনুভব করেন, তাই তার সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। অনেক
সময় নারীরা এই বিষয়ে অবগত না থাকায় বা ভুল তথ্যের কারণে স্বামীর প্রতি
সহানুভূতিশীল হতে পারেন না, যা সম্পর্ককে আরও খারাপ করে।
- সঙ্গিনীকে বোঝাতে হবে যে
এটি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একটি চিকিৎসাযোগ্য শারীরিক অবস্থা। পারস্পরিক
বিশ্বাস ও সহযোগিতা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
ধাপ ৩: পেশাদারী সহায়তা:
- যদি জীবনযাত্রার
পরিবর্তনে কাজ না হয় এবং শারীরিক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে একজন যৌন বিশেষজ্ঞ
(Sexologist) এবং
একজন মনোচিকিৎসক (Psychiatrist)-এর কাছে যান।
মনোচিকিৎসক মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা ট্রমার মতো কারণগুলো চিহ্নিত করে
থেরাপি প্রদান করতে পারেন।
- যদি প্রয়োজন হয়, তবে
চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ বা অন্যান্য থেরাপি, যেমন ভ্যাকুয়াম পাম্প
(Vacuum Pump)
ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ
বাড়াতে সাহায্য করে।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন কোনো স্থায়ী বা
আজীবনের অবস্থা নয়। এটি একটি সাময়িক সমস্যা, যা সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার
পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। আমি নিজে এমন অনেক ক্লায়েন্টকে দেখেছি,
যারা এই সমস্যা থেকে সফলভাবে পরিত্রাণ পেয়েছেন।
স্ত্রীর
ভূমিকা ও সহানুভূতি
স্ত্রীদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ:
আপনার স্বামী যদি ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে ভোগেন, তবে তাকে মানসিক সমর্থন দিন। তার এই
শারীরিক সমস্যাটিকে দুর্বলতা হিসেবে তুলে ধরে তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করবেন না।
মনে রাখবেন, জীবন শুধু যৌন সম্পর্ক নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু। আপনাদের পারস্পরিক
বোঝাপড়া, সম্মান এবং ভালোবাসা সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে পারে। অনেক সময় নারী
সঙ্গীনীর নেতিবাচক মন্তব্য বা অসদাচরণ পুরুষদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং
সমস্যা সমাধানে বাধা সৃষ্টি করে। তাই, কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়,
সে বিষয়ে দুজন মিলে গবেষণা করুন, পড়াশোনা করুন এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা দ্রুত
বীর্যপাতের মতো সমস্যাগুলো প্রায়শই জীবনযাত্রার ভুলভ্রান্তি এবং মানসিক অবস্থার
কারণে হয়। তাই জীবনযাত্রাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলা এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোই
প্রথম ও প্রধান কাজ। ঔষধ শেষ বিকল্প এবং তা অবশ্যই একজন নিবন্ধিত ও বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।
