১. দাম্পত্য জীবনের ভারসাম্য ও পারস্পরিক অধিকার
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নারীদের জন্য রয়েছে তাদের মতো করেই (পুরুষদের উপর) অধিকার, আর পুরুষদের রয়েছে নারীদের উপর এক স্তর বেশি কর্তৃত্ব।”
— (সূরা আল-বাকারা: ২২৮)
🔹 এই আয়াত আমাদের শেখায়—
• স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব শুধু চাওয়া নয়, দেওয়াও।
• ‘এক স্তর বেশি’ মানে হলো দায়িত্ব ও দায়িত্বশীলতা—না যে স্বামী কর্তৃত্বকারী, আর স্ত্রী অধীনস্থ।
📌 ইসলামে উভয়ের প্রতি রয়েছে পারস্পরিক দায়িত্ব:
• প্রোটেকশন
• আদর
• বোঝাপড়া
• দায়িত্ব ভাগাভাগি
২. স্বামীর দায়িত্ব (কুরআন ও হাদীসের আলোকে)
ক. পরিবার পরিচালনায় নেতৃত্ব ও দায়িত্ব
“পুরুষরা নারীদের অভিভাবক; কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অপরকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।”
— (সূরা আন-নিসা: ৩৪)
🔹 স্বামীর দায়িত্ব হলো:
• স্ত্রীকে সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া
• পরিবার চালানো (আর্থিক খরচ)
• ধর্মীয় নেতৃত্ব দেওয়া
• বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া
খ. স্ত্রীকে সম্মান ও ভালোবাসা দেওয়া
রাসূল ﷺ বলেন:
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে।”
— (তিরমিযী)
🔹 গৃহকর্মে সহায়তা, স্ত্রীর প্রতি দয়া, সময় দেওয়া, সুনজরে দেখা—এগুলো ইসলামী আদর্শ।
গ. যৌন ও মানসিক চাহিদা পূরণ করা
স্বামীকে স্ত্রীকে অবহেলা না করার হুকুম দিয়েছেন রাসূল ﷺ। স্ত্রীর চাহিদা গুরুত্ব সহকারে দেখা একজন ঈমানদার স্বামীর দায়িত্ব।
৩. স্ত্রীর দায়িত্ব (কুরআন ও হাদীসের আলোকে)
ক. স্বামীর সম্মান ও আনুগত্য
“সৎ নারীরা অনুগত, আর আল্লাহ যা হিফাযতের আদেশ দিয়েছেন, তার অদৃশ্যেও হিফাযতকারী।”
— (সূরা আন-নিসা: ৩৪)
🔹 স্ত্রীর দায়িত্ব:
• স্বামীর সম্মান রক্ষা
• ঘরকে শান্তির স্থান বানানো
• তার পেছনে বিশ্বস্ত থাকা
• অনৈতিক চাহিদার প্রতিরোধ
খ. সংসার রক্ষা ও সন্তান পালনে দায়িত্বশীলতা
নবী ﷺ বলেন:
“নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল এবং সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করবে।”
— (বুখারী ও মুসলিম)
🔹 রান্না, পরিচর্যা, সন্তানের দেখাশোনা—এগুলো দায়িত্ব হিসেবে নেওয়া এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে করলেই ইবাদত হয়ে যায়।
গ. ভালোবাসা ও রোমান্সে উত্তরণ
একজন স্ত্রী ভালোবাসা দিয়ে সংসারকে জান্নাত করে তুলতে পারে। প্রশান্ত মন, হাসিমুখ, কোমল ব্যবহার—এই সবই একজন স্ত্রীর মূল্যবান অবদান।
৪. দায়িত্বে ভারসাম্য ও বোঝাপড়ার গুরুত্ব
🔹 স্বামী-স্ত্রী কেউ কারো ‘বস’ নয়—দুজনেই একে অপরের সহচর, বন্ধু ও নির্ভরতার স্থান।
🔹 যদি কেউ শুধু দাবি করে, কিন্তু দায়িত্ব পালন না করে—তবে সম্পর্ক অসম হয়ে যায়।
🔹 রাসূল ﷺ ছিলেন:
• ঘরের কাজে সহায়ক
• দয়ার ভাণ্ডার
• সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ত্রীর মতামত গ্রহনকারী
🔹 আয়েশা (রা.) বলতেন:
“তিনি ছিলেন মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে কোমল ও মার্জিত ব্যক্তি।”
৫. দায়িত্ব পালনের মধ্যে সৌন্দর্য ও ইখলাস
একটি পরিবার টিকে থাকে দায়িত্ব পালনের মধ্যে আন্তরিকতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে।
“যদি তোমরা ভালোবাসা ও দয়ার সাথে দায়িত্ব পালন করো, তবে তা ইবাদতের মর্যাদা পায়।”
✅ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে দায়িত্ব পালনে:
• সংসার হয় শান্তির আবাস
• সন্তানেরা বড় হয় সুস্থ মানসিকতায়
• দাম্পত্য হয় জান্নাতমুখী পথ
🔚 উপসংহার
স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অপরের জন্য জীবনের রাহবার, না যে কেউ কারো দাস বা কর্তা।
এই অধ্যায় আমাদের শিক্ষা দেয়:
“প্রেম একপাক্ষিক দাবি নয়, বরং পারস্পরিক দায়িত্ব।”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *