ওয়েলবিয়িং

দাম্পত্য ও সুস্থতা

✦ সুখী দাম্পত্য জীবনে শারীরিক সুস্থতা কেন অপরিহার্য?

দাম্পত্য জীবন মানেই একে অপরের হাত ধরে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, দায়িত্ব আর বোঝাপড়ার এক দীর্ঘ সফর। এই সফর তখনই শান্তিময় হয়, যখন দুজনই শরীর ও মনে সতেজ, প্রাণবন্ত এবং সুস্থ থাকে। তাই শারীরিক সুস্থতা শুধু দাম্পত্য জীবনের একটি দিক নয়, এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যমও।

‍🔸 আত্মবিশ্বাস ও আকর্ষণ বাড়ায়
শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষ নিজের শরীর নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়। সে নিজেকে যেমন ভালোবাসে, তেমনি সঙ্গীকেও আনন্দ দিতে পারে। সুস্থতা মানুষের মুখে হাসি আনে, চেহারায় প্রশান্তি এনে দেয়—যা দাম্পত্য জীবনে সৌন্দর্য ও শক্তির যোগফল হিসেবে কাজ করে।

🔸 ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে
শরীর যদি ক্লান্ত, দুর্বল কিংবা অসুস্থ থাকে, তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রভাবিত হয়। অনেক সময় দেখা যায়, এক পক্ষের শারীরিক অক্ষমতা বা অবহেলা অন্য পক্ষের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করে। তাই স্বাস্থ্য ও শক্তির ভারসাম্য ধরে রাখলে সম্পর্ক আরও প্রাণবন্ত ও প্রশান্ত হয়।

🔸 মানসিক শান্তির জন্য অপরিহার্য
শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যখন শরীর ভালো থাকে, তখন মনও চঞ্চল বা উদ্বিগ্ন থাকে না। এর ফলে দাম্পত্য জীবনে সহানুভূতি, ধৈর্য এবং বোঝাপড়ার জায়গাটি আরও দৃঢ় হয়।

🔸 ইসলাম কী বলছে?
রাসূল ﷺ স্বাস্থ্যকে আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সুস্থ শরীর ও সময়কে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া দুইটি বিশেষ নেয়ামত বলেছেন, যা অধিকাংশ মানুষ অবহেলা করে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত শরীরের যত্ন নেওয়া এবং একে অপরকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা—এটিও একটি সদকা ও ভালোবাসার প্রকাশ।

 শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় হয়ে আমাদের করণীয় কী?

জীবন সবসময় মসৃণ পথে চলে না। কখনো ক্লান্তি, কখনো ব্যথা, কখনো দুশ্চিন্তা এসে আমাদের শক্তি কেড়ে নেয়। শারীরিক অসুস্থতা যেমন দৃশ্যমান, মানসিক অসুস্থতা তেমনই নিঃশব্দে আমাদের ভেতর থেকে ক্ষয়ে দিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা তখন কী করব?

🔸 অসুস্থতাকে অস্বীকার নয়, মেনে নেওয়া শুরুর ধাপ

প্রথম করণীয় হলো—নিজের অবস্থা স্বীকার করা। অনেকেই সমস্যা বুঝেও তা অস্বীকার করে, ফলে দেরিতে ব্যবস্থা নেয়। রোগ যত দ্রুত শনাক্ত হবে, তত দ্রুত সে আরোগ্যের দিকে এগোবে।

🔸 চিকিৎসা নেওয়াকে সংকোচের নয়, সচেতনতার কাজ মনে করুন
শারীরিক অসুস্থতায় যেমন ডাক্তার দেখানো হয়, মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশায়ও তাই করতে হবে। কাউন্সেলিং নেওয়া বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া কোনো দুর্বলতা নয় বরং সাহসিকতার কাজ।

🔸 প্রিয়জনের সান্নিধ্য বড় ওষুধ

কষ্টের সময় একাকীত্ব যেন বিষের মতো কাজ করে। এ সময় পরিবার, জীবনসঙ্গী কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের পাশে পাওয়া মানসিক ও শারীরিকভাবে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পথ তৈরি করে। কাউকে জড়িয়ে ধরা, খোলাখুলি কথা বলা, কান্না করা—এসবও আত্মার জন্য ওষুধ।

🔸 আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে যাওয়া
মুমিন জানে, কষ্টের মাঝে আল্লাহর পরীক্ষা লুকিয়ে আছে। রাসূল ﷺ দোয়া করতেন:

“হে আল্লাহ! আপনি-ই শিফা দানকারী, আপনার শিফা ব্যতীত কোনো শিফা নেই, আপনি এমন শিফা দিন যাতে কোনো ব্যাধি না থাকে।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

দোয়া, নামাজ ও কুরআনের তিলাওয়াত রোগীর মন শান্ত করে, হৃদয় প্রশান্ত করে এবং দেহকে দ্রুত আরোগ্যের পথে এগিয়ে দেয়।

যাদের কাছে যে বিষয়ের পরামর্শ পাবেন

দাম্পত্য সুস্থতার বিভিন্ন উপায়