হালাল প্রেমের পাঠশালা

ভালোবাসা জীবনের অমূল্য সম্পদ, মহামূল্যবান ও পবিত্র এক সম্বল। ভালোবাসা আল্লাহর সেরা দান। ভালোবাসা আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি, স্বপ্ন দেখি, ঘর বাঁধি, পরম মমতায় সন্তানদের লালন করি। শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতির প্রতিটি অনুষঙ্গেও ভালোবাসার প্রকাশ স্পষ্ট—সূর্য আলো দেয়, চাঁদ জোৎস্না ছড়ায়, পাখিরা গান গায়, নদী বয়ে চলে। ভালোবাসার সুরে সুরে গড়ে ওঠে জীবনের সবকিছু।

কিন্তু যখন এই মূল্যবান ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ে আসন গেঁড়ে নেয়, তখন অনেক সময় আমরা একে অপব্যবহার করি। ভালোবাসার সঠিক পথ থেকে সরে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ি। যে ভালোবাসা আমাদের জীবনের সঞ্জীবনী শক্তি, সেটাই ভুল পথে পরিচালিত হলে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। অঙ্কুরেই ঝরে পড়ে প্রেম। অথচ প্রেম ছিল আল্লাহর এক অপার নিয়ামত—সারাজীবন কাটানোর পাথেয়। কিন্তু জীবনের শুরুতেই যদি ভালোবাসার জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে সেই জীবনের গতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা, ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজনের পারস্পরিক আন্তরিকতা—এসব ভালোবাসার মূল হলো স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। দাম্পত্য ভালোবাসাই একমাত্র সম্পর্ক, যা রক্তের টান ছাড়াই গভীর ও মৌলিক। এখান থেকেই জন্ম নেয় রক্তের সম্পর্কের ভালোবাসা। যদি দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা চর্চা করা হয়, তবে তা সর্বক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করে। এক সুখী দম্পতির সন্তান বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়েই বড় হবে এবং ভাইবোন ও অন্যদের সাথেও ভালো আচরণ করবে।

প্রেম, ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা—এই অনুভূতিগুলো যদি এক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে যেত, তাহলে কী হতো কল্পনা করুন! সুতো ছেঁড়া তাসবির দানার মতো আমাদের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। ভালোবাসার বন্ধন আমাদের অস্তিত্বেরই বন্ধন। যদি এটি শিথিল হয়ে যায়, তবে জীবনের স্বাভাবিক গতি থমকে যাবে। আল্লাহ না করুন, যদি আমরা এ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাই, তাহলে আমাদের দুর্গতির কোনো সীমা থাকবে না, মানবসমাজ বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে না।

তাই, যদি আমরা ভালোবাসার বন্ধনকে অটুট ও সুদৃঢ় রাখতে চাই, তবে আমাদের উচিত সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসার চর্চা করা ও একে লালন করা। আমাদের ভালোবাসা পবিত্র থাকছে, নাকি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে—তা খুঁজে বের করা জরুরি। কেবল ভালোবাসা নয়, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টাতেই জীবন সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা সেই পদ্ধতি নিয়েই একে একে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।