বিয়ে হলো দুইটি হৃদয়ের চুক্তি, দুটি জীবনকে একসঙ্গে পথচলার অঙ্গীকারে আবদ্ধ করা। এই সম্পর্ক যেন সুদৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী ও পরিপূর্ণ হয়—সে জন্য দরকার কিছু মজবুত ভিত্তি। বৈবাহিক সম্পর্ককে শুধু সামাজিক বা মানসিক বন্ধন হিসেবে দেখলে হবে না, এটি একটি আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনও বটে। এ অধ্যায়ে আমরা তিনটি মূল ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করবো: বিশ্বাস ও নির্ভরতা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা, এবং আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতা।
১. বিশ্বাস ও নির্ভরতা
বৈবাহিক সম্পর্ক গঠনের প্রথম ধাপই হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া কোনো সম্পর্কের ওপর ঘর বানানো যায় না। একটি দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই উচিত একে অপরকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা, মনের কথা খুলে বলা এবং সংকটের সময় একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। বিশ্বাসের ভিত যদি দুর্বল হয়, তাহলে সন্দেহ, নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে।
এই বিশ্বাস থেকে গড়ে ওঠে নির্ভরতা—এক ধরনের মানসিক আশ্রয়, যা একজন জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত। জীবনের নানা ওঠাপড়ায় যদি একজন তার সঙ্গীর ওপর ভরসা করতে না পারে, তাহলে সেই সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একে অপরের ওপর নির্ভর করার মানে এই নয় যে কেউ দুর্বল; বরং এটি বোঝায় যে বৈবাহিক জীবনে আমরা পরস্পরের শক্তি, পরস্পরের আশ্রয়।
২. ভালোবাসা ও সহমর্মিতা
ভালোবাসা বিয়ের এক অনন্য উপাদান, কিন্তু এটি সময়ের সাথে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন সহমর্মিতা। একটি সম্পর্ক টিকে থাকে তখনই, যখন ভালোবাসা আবেগকে ছাড়িয়ে দায়িত্বে রূপ নেয়। ভালোবাসার অর্থ কেবল আনন্দের মুহূর্ত ভাগাভাগি নয়, বরং কষ্টের সময় একে অপরকে বোঝা এবং পাশে থাকা।
সহমর্মিতা হলো দাম্পত্য জীবনের এক অসাধারণ গুণ, যা ঝগড়া-মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং কিংবা মান-অভিমানকে সহজেই দূর করে দিতে পারে। যখন একজন মানুষ নিজের সমস্যার কথা না বলেও তার সঙ্গীর কাছে বুঝে যায় যে সে কষ্টে আছে—সেটাই হলো প্রকৃত সহানুভূতি। ভালোবাসা ও সহমর্মিতা মিলেই গড়ে তোলে এক আন্তরিক ও গভীর সম্পর্ক, যা কোনো বাইরের ঝড়েই সহজে ভাঙে না।
৩. আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতা
বিয়ের সম্পর্ক যদি কেবল দুনিয়াবি ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাহলে সেটা হয় ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু যদি এই সম্পর্কের পেছনে থাকে আল্লাহর ভয় এবং তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসা—তাহলে সে সম্পর্ক হয়ে ওঠে দৃঢ়, পবিত্র ও চিরন্তন।
একজন স্বামী যখন জানে, “আমি আমার স্ত্রীর হক আদায় করছি, কারণ আমি আল্লাহকে ভয় করি,” কিংবা একজন স্ত্রী যখন ভাবে, “আমি আমার স্বামীর প্রতি দায়িত্বশীল, কারণ আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাই”—তখন সেই দাম্পত্য জীবন হয় বরকতময়। আল্লাহভীতি মানুষকে অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয় না, অহংকারে অন্ধ করে না, বরং নম্রতা, সহনশীলতা ও ক্ষমার শিক্ষায় গড়ে তোলে। দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য শুধু জীবনসঙ্গী নয়, বরং জান্নাতে পৌঁছানোর সাথিও হয়ে ওঠে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *